অফিসকক্ষ থেকে উত্তরপত্র-নম্বরপত্র গায়েব, তদন্ত কমিটি গঠন

অফিসকক্ষ থেকে উত্তরপত্র-নম্বরপত্র গায়েব, তদন্ত কমিটি গঠন: ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের ব্যক্তিগত দাপ্তরিক কক্ষ থেকে গায়েব হয়ে গেছে বিভাগের পরীক্ষার উত্তরপত্র, নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি। তবে এ ঘটনায় এক সপ্তাহ পরও তদন্ত কমিটি করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দুই ঘণ্টার মধ্যে এদিন সন্ধ্যায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবির।
ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগে। উত্তরপত্র, নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব হওয়ায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল থানায় করা সাধারণ ডায়েরি থেকে জানা যায়, বিভাগের পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে প্রতিদিনের মতো কলা ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ব্যক্তিগত অফিসকক্ষটি তালাবদ্ধ করে বাসায় যান তিনি। পরদিন সকাল ১০টার সময় তিনি এসে দেখতে পান, তাঁর কক্ষের জানালার কাচ ভাঙা, অফিশিয়াল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও গোপনীয় নথি, একাধিক শিক্ষাবর্ষের গোপনীয় নম্বরপত্র, পরীক্ষার উত্তরপত্র, উপস্থিতি রেজিস্টার খাতা, পেনড্রাইভ নেই। তবে সেখানে ব্যক্তিগত স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে।
ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘সেদিন শিক্ষার্থীদের রিহার্সাল করাতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালেই অফিসে চলে আসব ভেবে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো সেখানে রেখে যাই। কিন্তু ৯ ঘণ্টার মধ্যেই তা চুরি হওয়া মানে স্পষ্টই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা করেছে তারা নিশ্চয়ই অনেক দিন ধরে আমাকে অনুসরণ করেছে এবং আমাকে বিপদে ফেলতেই এ কাজ করেছে। আমি বিভাগের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার। ’
বিষয়টি স্পর্শকাতর জানিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শোনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফোন করি এবং বিল্ডিংয়ের পেছনে পাঠাই। আমি কক্ষে গিয়ে ম্যাডামের কাছে জানছিলাম যে কী কী ছিল সেখানে। এক পর্যায়ে ম্যাডাম বললেন, ‘সেই ব্যাগে থাকা বেশির ভাগ জিনিসই নেই। যেখানে নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও পরীক্ষার গোপনীয় নথিপত্র ছিল। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অভ্যন্তরীণ সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তির কাজ বলে ধারণা করছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এমন ঘটনায় মামলার পরিবর্তে সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। আর ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, কক্ষটির জানালার একটি গ্লাস ভাঙা পাওয়া যায়। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জানালাটির গ্রিল ছিল অক্ষত। অর্থাৎ ভেতরে ঢুকতে পারেনি কেউ। তাহলে কিভাবে গায়েব হলো স্পর্শকাতর এসব নথি? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বর্ণপ্রভার ভাষ্য, তাঁকে বিপদে ফেলতেই কেউ সরিয়েছে নথি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রধান আল জাবির বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার প্রশ্নই ওঠে না। একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত কক্ষে কোনো উপকরণ রাখলে তা সুরক্ষিত হিসেবেই রাখেন। তিনিও তা-ই করেছিলেন। তা ছাড়া এখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকে। ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। না হলে সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিল; সেগুলোও চুরি হতে পারত। ’
গুরুতর এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরও কেন তদন্ত কমিটি হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাকে জানিয়েছিলেন, যে জিনিসগুলো মিসিং ছিল তার বেশির ভাগই তাঁরা উদ্ধার করতে পেরেছেন। পরে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম সেগুলো পাননি। যেহেতু দুজনের কথার মধ্যে গরমিল পাওয়া গেছে, সে জন্য আমাদের তদন্তকাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। আমরা দ্রুতই অধিকতর তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করার চেষ্টা করব। ’
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমেদুল বারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির, প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা রামিম আল করিম।
ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এটি চুরি নাকি অন্য ঘটনা এখানে রয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। পরে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। ’
Comments are closed.